করোনা আতঙ্কের মধ্যেও ওসমানীনগরে চলছে ষাড়ের লড়াই

প্রকাশিত: ৩:০৭ পূর্বাহ্ণ, মার্চ ২২, ২০২০

করোনা আতঙ্কের মধ্যেও ওসমানীনগরে চলছে ষাড়ের লড়াই

আলোকিত সিলেট ডেস্ক :::
করোনা ভাইরাস সংক্রমণের আতঙ্কের মধ্যেও থেমে নেই ওসমানীনগরের পল্লীগুলোতে ষাড়ের লড়াই। প্রবাসী অধ্যুষিত এই উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের হাওরগুলোতে প্রশাসনে নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে আয়োজন করা হচ্ছে ষাড়ের লড়াই।
জানা গেছে, এ ষাড়ের লড়াই আয়োজনের পেছনে রয়েছেন যুক্তরাজ্য প্রবাসীরা। সম্প্রতি দেশে ফেরা এসব প্রবাসীরা ‘হোম কোয়ারেন্টাইন’-এর নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে নিজ নিজ ষাড় নিয়ে উপস্থিত হচ্ছেন লড়াইয়ের মাঠে। ফলে, ভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকিতে রয়েছেন উপজেলার সাধারণ মানুষ।
প্রবাসী অধ্যুষিত সিলেটের ওসমানীনগর থানার বিভিন্ন স্থানে গত প্রায় এক মাস ধরে এ ভাবে ষাড়ের লড়াই আয়োজনের খবর পাওয়া যাচ্ছে। করোনা সংক্রমণের আশঙ্কায় সকল স্থানে সব ধরনের জনসমাবেশ নিষিদ্ধ করা হলেও সেই নিষেধাজ্ঞা অগ্রাহ্য করে ষাড়ের লড়াই দেখতে উপস্থিত হচ্ছেন হাজার হাজার মানুষ।
গত ১৭ মার্চ ওসমানীনগর উপজেলার তাজপুর সংলগ্ন নিজ করনসী মাঠে এ ধরনের একটি ষাড়ের লড়াই আয়োজন করা হয়। ওসমানীনগর থানা ভবন থেকে মাত্র কয়েক শ’ গজ দূরে এ লড়াই আয়োজনকারীদের মধ্যে ছিলেন সৈয়দ উস্তার আলী, সৈয়দ আনোয়ার আলী, খালেদ মিয়া, সৈয়দ মিয়া, হান্নান মিয়া, করিম মিয়াসহ বেশ কয়েক জন স্থানীয় বাসিন্দা। আশপাশের বিভিন্ন গ্রাম থেকে, এমনকি উপজেলার প্রত্যন্ত স্থান থেকেও অর্ধ শতাধিক ষাড় নিয়ে আসা হয় লড়াইয়ে অংশগ্রহণের জন্য। এ ধরনের আয়োজনের খবর পেয়ে দুপুরে ওসমানীনগর থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে আয়োজকদের এ লড়াই বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়ে আসে। কিন্তু, থানা প্রশাসনের এই নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে আয়োজকরা লড়াই সম্পন্ন করেন। অবশ্য, ষাড়ের লড়াই চলাকালে দু’পক্ষের কথা কাটাকাটির জেরে সংঘর্ষও বাধে। এ সময় একটি সিএনজি অটোরিক্সাও ভাংচুর করা হয়। আহত হন বেশ কয়েক জন, যারা স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা নেন।
এভাবে, প্রায় প্রতিদিনই উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ষাড়ের লড়াই আয়োজনের খবর পাওয়া যাচ্ছে। প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে এ ধরনের আয়োজনের কারণে করোনা ভাইরাস সংক্রমণের আতঙ্কে রয়েছেন উপজেলার সচেতন মহল।
ওসমানীনগর উপজেলা মানবাধিকরা বাস্তবায়ন সংস্থার সভাপতি সাংবাদিক মুহিবুর রহমান বলেন, উপজেলার বিভিন্ন স্থানে আমরা এ ধরনের ষাড়ের লড়াই আয়োজনের খবর পাচ্ছি। এ সব আয়োজনে ব্যাপক লোক সমাগম হচ্ছে। করোনা আতঙ্কের মধ্যে এ ধরনের আয়োজন কোনক্রমেই সমর্থন যোগ্য নয়। প্রশাসনের উচিৎ কঠোরভাবে এ ধরনের আয়োজন বন্ধ করা।
ওসমানীনগর জনকল্যাণ পরিষদের আহবায়ক এম. সামছুল আলম বলেন, প্রবাসী অধ্যুষিত হওয়ায় ওসমানীনগর উপজেলায় এ ধরনের ষাড়ের লড়াই আয়োজনে সম্পৃক্ত আছেন যুক্তরাজ্য প্রবাসীরা। দেশে ফিরে তারা ‘হোম কোয়ারেন্টাইন’-এ না থেকে এসব ষাড়ের লড়াইয়ে উপস্থিত হচ্ছেন। ফলে, করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা একেবারে উড়িয়ে দেয়া যাচ্ছেনা।
প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা অগ্রাহ্য করে এ ধরনের ষাড়ের লড়াই আয়োজন সম্পর্কে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে ওসমানীনগর থানার অফিসার ইনচার্জ রাশেদ মোবারক বলেন, আমরা যেখানেই জনসমাবেশ আয়োজনের সংবাদ পাচ্ছি, আমাদের লোক পাঠিয়ে তা বন্ধ রাখার অনুরোধ জানাচ্ছি। কোন কোন স্থানে একেবারে হাওর অঞ্চলে এ ধরনের ষাড়ের লড়াই আয়োজন করা হচ্ছে। দুর্গম হওয়ায় পুলিশের পক্ষে যথাসময়ে উপস্থিত হয়ে তা বন্ধ করা সম্ভব হচ্ছেনা। তবে, একাধিক স্থানে আমরা ইতোমধ্যে এ ধরনের আয়োজন ও লোক সমাগম বন্ধ করতে সক্ষম হয়েছি।
বিভিন্ন সূত্রে কথা বলে জানা গেছে, গত ১৮ মার্চ পর্যন্ত ওসমানী বিমানবন্দর দিয়ে যুক্তরাজ্য থেকে দেড় মাসে সিলেট আসছেন প্রায় ২০ হাজার যুক্তরাজ্য প্রবাসী। এদের বেশীর ভাগই সিলেটের প্রবাসী অধ্যুষিত বালাগঞ্জ, ওসমানীনগর, বিশ্বনাথ, নবীগঞ্জ ও জগন্নাথপুর এলাকার বাসিন্দা। সরকারের তরফ থেকে এদের ‘হোম কোয়ারেন্টাইন’-এ থাকার নির্দেশ দেয়া হলেও অনেকেই তা মানছেন না।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ