বেগম জিয়ার মুক্তির মেয়াদ বর্ধিতকরণ নিয়ে প্রত্যাশা: সমীর কান্তি পুরকায়স্থ

প্রকাশিত: ৫:৪২ অপরাহ্ণ, আগস্ট ১০, ২০২০

বেগম জিয়ার মুক্তির মেয়াদ বর্ধিতকরণ নিয়ে প্রত্যাশা: সমীর কান্তি পুরকায়স্থ

গত ৫ আগস্ট জনকণ্ঠে প্রকাশিত বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার শর্ত সাপেক্ষে মুক্তির মেয়াদ সাড়ে চার মাস শেষ হয়ে গিয়েছে। আরমাত্র দের মাস বাকী। অর্থাৎ দেড় মাস পর আবার তাঁকে ফিরে যেতে হবে কারাগারে। বিষয়টি বেগম জিয়ার জন্য যেমন চিন্তার ব্যাপার তেমনি আত্মীয় স্বজনসহ বিএনপি নেতৃবৃন্দ ও সমর্থকদেরও। মূলত আত্মীয়স্বজনদের বিশেষ তৎপরতায়ই বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি হয়েছিল। স্বজনদের মধ্যে যাদের বিশেষ ভূমিকা ছিল তাদের মধ্যে বেগম জিয়ার ভাই শামীম ইস্কান্দর, বােন সেলিমা ইসলাম ও তাঁর স্বামী রফিকুল ইসলাম উল্লেখযােগ্য। দলীয়ভাবে যদিও বেগম জিয়ার মুক্তি সম্ভব হয়ে উঠেনি তবুও মুক্তির ব্যাপারে যারা সােচ্ছার ছিলেন তাঁদের মধ্যে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপার্সন, দলীয় মহাসচিব সহ কতিপয় সিনিয়র নেতৃবৃন্দ। বর্তমানে মুক্তির সময়সীমা বর্ধিতকরণ নিয়ে আত্মীয় স্বজন সহ কিছু নেতৃবৃন্দও ভাবছেন। আবার কিছু সংখ্যক নেতৃবৃন্দ আছেন যারা এ বিষয়টি নিয়ে আর ভাবছেন না। তাঁরা মনে করছেন আর ঝামেলায় জড়িয়ে লাভ নেই। এ কথাটি বলার কারণ হল এই যে বেগম জিয়া যখন কারাগারে ছিলেন তখন তাঁর মুক্তির ব্যাপারে কিছু সংখ্যক বিএনপি নেতা ছাড়া আর সবাই নীরব ভূমিকা পালন করেন। গুলশান কার্যালয়ে মিটিং হয়েছে কিন্তু তারা বড় ধরনের কোন কর্মসূচী দিতে পারেননি। দেশবাসী তখন দেখতে পায়নি রাজপথ কাঁপানাে আন্দোলন। এতে তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা যেমন হতাশ হয়েছেন তেমনি বেগম জিয়াও হয়েছেন আশাহত। কিন্তু বিএনপি সমর্থক জনগণ প্রস্তুত ছিল আন্দোলনের জন্য। সেদিন বিএনপি কেন আন্দোলনের ডাক দিতে ব্যর্থ হয়েছিল? এর পেছনে কি কোন ষড়যন্ত্র লুকিয়েছিল? এ নিয়ে জনমনে আজও প্রশ্ন। বেগম জিয়া একজন জনপ্রিয় নেত্রী এ কথা অস্বীকার করার কোন উপায় নেই। আশির দশকে “স্বৈরাচার সরকার হঠাও” আন্দোলনে সাতদলীয় জোটের নেত্রী হিসেবে তিনি যে আপােসহীন ভূমিকা রেখেছিলেন জনগণ তা আজও তা ভুলেনি। রাজপথ নেতাকর্মীদের রক্তে রঞ্জিত হয়েছে তবুও তিনি রাজপথ ছেড়ে যাননি। সে সময় আন্দোলনে ১৫ দলও ছিল। ১৫ দলীয় জোটের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন আওয়ামীলীগের সভাপতি আজকের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। পরবর্তীতে বাইশ দলের আন্দোলনের চাপে স্বৈরাচার সরকার বাধ্য হয় ক্ষমতা ছেড়ে দিতে। পরে তত্ত্ববধায়ক সরকার গঠন হয় বিচারপতি সাহাব উদ্দীনের নেতৃত্বে।

তারপর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে ১৯৯১ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে বিএনপি বেশীর ভাগ আসন পেয়ে নির্বাচিত হয়। দলীয় নেত্রী হিসেবে বেগম জিয়া প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়ে সরকার গঠন করেন। স্বাধীনতার পর আমাদের দেশে মন্ত্রী পরিষদ শাসিত সরকার ছিল। ১৯৭৫ সালে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর আমাদের দেশে রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার গঠিত হয়। ১৯৯১ সালে বিএনপি সরকার জাতিকে আবার সংসদীয় পদ্ধতির সরকার উপহার দেয়। তখন সংসদে বিরােধী দল হিসেবে আওয়ামীলীগেরও কোন আপত্তি থাকেনি। এরপর আরও দুইবার বেগম জিয়া প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। তাই তিনবারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেশে যেমন তার একটি ভাবমূর্তি রয়েছে তেমনি বিদেশেও আছে। আমাদের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে যেমন সফলতা দেখিয়ে যাচ্ছেন তেমনি মানবতার একজন জননী হিসেবেও আন্তর্জাতিক বিশ্বে খ্যাতি অর্জন করেছেন। বঙ্গবন্ধুর যেমন তাঁর প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক নেতাদের প্রতি সহমর্মিতা ছিল তেমনি তাঁর সুযােগ্য কন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মধ্যেও আমরা তা দেখতে পাই। তিনি যে তাঁর নির্বাহী ক্ষমতা বলে বেগম জিয়াকে ছয় মাসের মুক্তি দিয়েছেন তা একজন রাজনৈতিক নেত্রী হিসেবে আর একজন রাজনৈতিক নেত্রীর প্রতি সহমর্মিতারই বহিঃ প্রকাশ। বিশ্ব আজ করােনা ভাইরাসের আক্রমনে আক্রান্ত। এতে অনেক সন্তান হারিয়েছে তার পিতা-মাতাকে, অনেক পিতা-মাতা হারিয়েছে তাদের সন্তানদের। আবার অনেকে হারিয়েছেন তাদের আত্মীয় স্বজনদের। তাদের হৃদয় আজ দুঃখে ভারাক্রান্ত শুধু তারা বললে ভুল হবে আমরা দেশবাসী সবাই। তাই এমনতর পরিস্থিতিতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিএনপি নেত্রী বেগম জিয়াকে ফের কারাগারে পাঠিয়ে বিএনপি পরিবারের হৃদয়ে আঘাত দিবেন বলে আমার মনে হয় না। শর্ত সাপেক্ষে আবার মুক্তির সময়সীমা বর্ধিত হবে বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস। এ ব্যাপারে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কি নির্দেশ আসবে তা দেখার অপেক্ষায় রইলাম।

লেখক: সমীর কান্তি পুরকায়স্থ
সহঃ প্রধান শিক্ষক (অবঃ)
দি এইডেড হাই স্কুল, সিলেট।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ