রেল বন্ধে বিএনপির সিদ্ধান্ত ছিল আত্মঘাতী

প্রকাশিত: ৮:৩৬ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ১৬, ২০১৯

রেল বন্ধে বিএনপির সিদ্ধান্ত ছিল আত্মঘাতী

আলোকিত সিলেট ডেস্ক ::: রেল বন্ধে বিএনপি সরকারের সিদ্ধান্ত আত্মঘাতী ছিল বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, একটি আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রেসক্রিপশনের প্রেক্ষিতে তৎকালীন বিএনপি সরকারের জনবান্ধব রেলকে বন্ধ করে দেয়ার সিদ্ধান্ত ছিল দেশের জন্য আত্মঘাতী।

তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি, রেল বন্ধ করে দেওয়া, আমাদের দেশের জন্য একটা আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত ছিল। একটা দেশের যোগাযোগের জন্য রেলপথ, সড়ক পথ এবং নৌপথ এবং সেই সাথে বিমান- সবগুলো পথই চালু থাকা দরকার।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কোন এক আন্তর্জাতিক সংস্থার নির্দেশনা ছিল যে, যেটা লাভজনক নয় তা বন্ধ করে দেয়ার। সেই নির্দেশনায় বিএনপি ক্ষমতায় থাকতে রেল যোগাযোগটাকেই সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেয়ার জন্য অনেকগুলো রেললাইন এবং রেল স্টেশন বন্ধ করে দেয়।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বুধবার বেলা সাড়ে ১১টায় গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে কুড়িগ্রাম-ঢাকা-কুড়িগ্রাম রুটে নতুন আন্তঃনগর ট্রেন ‘কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেসে’র আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনকালে প্রদত্ত ভাষণে এসব কথা বলেন। খবর বাসসের।

তিনি একই সঙ্গে রংপুর এক্সপ্রেস ও লালমনি এক্সপ্রেস ট্রেনের র‌্যাকে নতুন কোচ প্রতিস্থাপনেরও উদ্বোধন করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, অত্যন্ত দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো বাংলাদেশের রেল যোগাযোগ হলো এদেশের সাধারণ এবং মধ্যবিত্তের অন্যতম একটি চলাচলের মাধ্যম। যারা ক্ষমতায় ছিল (বিএনপি নেতৃত্বাধীন সরকার) তারা রেলকে ধ্বংসের এবং একে বন্ধ করে দেয়ার পরিকল্পনা করেছিল।

শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারে আসার পরই সিলেট এবং চট্টগ্রামে দু’টি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর চালুসহ রেলকে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা গ্রহণ করে।

তিনি বলেন, ‘রেল যোগাযোগটা যাতে আরও উন্নত হয় তার ব্যবস্থা হিসেবে আমরা উত্তরবঙ্গসহ সমগ্র বাংলাদেশেরই রেল যোগাযোগ স্থাপনের একটি উদ্যোগ গ্রহণ করি।’

এ সময় বঙ্গবন্ধু যমুনা সেতু নির্মাণের সময় সেটাতে রেল লাইন স্থাপনসহ সেতুটিতে বহুমুখীকরণে তাঁর সরকার উদ্যোগে গ্রহণ করে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা যমুনা সেতুর মূল নকশা প্রণয়ন হয়ে যাওয়ার পর সরকারে আসলেও আমরা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি এই সেতুর সাথে আমাদের রেলের লাইন, গ্যাস এবং বিদ্যুতের লাইন থাকতে হবে। এটি মাল্টিপারপাস হবে এবং সেই মোতাবেকই আমরা এর সঙ্গে রেল সংযোগ সম্পৃক্ত করি।’

তিনি বলেন, ‘এই রেল লাইন স্থাপনের ফলে উত্তরবঙ্গের সঙ্গে আমাদের রাজধানী ঢাকার ভাল যোগাযোগের সুব্যবস্থা হয়ে যায়।’

তিনি বলেন, ১৯৬৫ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের পর যেসব রেলপথ বা লিংক বন্ধ হয়ে গিয়েছিল সেসবও তাঁর সরকার নতুনভাবে চালু করার উদ্যোগ নিয়েছে। পাশাপাশি, যেসব স্থানে রেল যোগাযোগ ছিল না সেখানেও রেল যোগাযোগ চালু করা হচ্ছে। ফলে, সাধারণের যোগাযোগ বৃদ্ধির মাধ্যমে স্বল্প খরচে পণ্য পরিবহনের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।

তিনি বলেন, উৎপাদিত পণ্য পরিবহন এবং বাজারজাত সহজ করে দিলে আমাদের দেশের কৃষকরাই সব থেকে লাভবান হবে।

তিনি এ সময় চিলমারী বন্দর পুনরায় চালুকরণসহ উত্তরাঞ্চলের ভাওয়াইয়া গানের প্রচার প্রসার এবং সংরক্ষণেও তাঁর সরকার এগিয়ে আসবে বলে উল্লেখ করেন।

প্রধানমন্ত্রী এ সময় কুড়িগ্রামে একটি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার এবং লালমনিরহাটে একটি অ্যারোস্পেস এন্ড এরোনটিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের মাধ্যমে তাঁর সরকার সেখানে প্লেন তৈরি করার স্বপ্ন দেখছে বলেও উল্লেখ করেন।

তিনি বলেন, ‘যোগাযোগ ব্যবস্থার সঙ্গে সঙ্গে অর্থনৈতিক উন্নতিটাও প্রয়োজন। আর যেন উত্তরবঙ্গবাসীকে মঙ্গা শব্দটা শুনতে না হয় সে ব্যবস্থা আমরা করেছি।’

অনুষ্ঠানে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মোফাজ্জেল হোসেন স্বাগত বক্তৃতা করেন এবং রেল বিভাগের বিভিন্ন উন্নয়নের বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরেন এবং ভিডিও চিত্র পরিবেশন করেন।

সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, বাণিজ্য মন্ত্রী টিপু মুনশি এবং সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী মো. নুরুজ্জামান আহমেদ গণভবন প্রান্তের মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন। রেলপথ মন্ত্রী মো. নুরুল ইসলাম সুজন কুড়িগ্রাম স্টেশন থেকে যুক্ত হয়ে অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন।

প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. নজিবুর রহমান ভিডিও কনফারেন্সটি সঞ্চালনা করেন।

কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট এবং রংপুর রেলস্টেশন প্রান্তের সংযুক্ত জনগণের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী পরে মতবিনিময় করেন।

বক্তব্য শেষ করে বাঁশি ফুঁকে ও সবুজ পতাকা উড়িয়ে নতুন ট্রেনের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। পরে রংপুর ও লালমনি এক্সপ্রেস ট্রেনের র‌্যাকে নতুন কোচ প্রতিস্থাপন করেন শেখ হাসিনা।

রেল কর্তৃপক্ষ জানায়, ‘কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেস’ বুধবার ছাড়া সপ্তাহের বাকি ৬ দিন সকাল ৭টা ২০ মিনিটে কুড়িগ্রাম রেলস্টেশন থেকে ছেড়ে বিকেল ৫টা ২৫ মিনিটে ঢাকায় পৌঁছবে। ঢাকার কমলাপুর স্টেশন থেকে রাত ৮টা ৪৫ মিনিটে ছেড়ে সকাল ৬টা ২০ মিনিটে কুড়িগ্রাম স্টেশনে পৌঁছবে।

ট্রেনটি ১৪টি বগি নিয়ে যাতায়াতে রংপুর-বদরগঞ্জ-পার্বতীপুর-জয়পুরহাট-সান্তাহার-নাটোর-মাধনগর-টাঙ্গাইল-মৌচাক-বিমানবন্দরসহ মোট ১০টি স্টেশনে যাত্রী ওঠানামা করাবে। আগামী ১৭ অক্টোবর থেকে ট্রেনটির বাণিজ্যিক যাত্রা শুরু হবে।

আন্তঃনগর ট্রেনটি প্রতিদিন ঢাকা-কুড়িগ্রামের ২৮৬ দশমিক ৮ মাইল বা ৪৬১ কিলোমিটার পথ পাড়ি দেবে। কুড়িগ্রাম থেকে ঢাকা যাত্রায় মোট ৬৫৭টি আসন সুবিধা এবং ঢাকা থেকে কুড়িগ্রাম যাত্রায় ৬৩৮টি আসন সুবিধা থাকবে। শোভন চেয়ার ৫১০ টাকা, এসি চেয়ার ৯৭২ টাকা, এসি সিট ১১৬৮ টাকা এবং এসি বাথ ১৮০৪ টাকা আসন ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ