আন্দোলনকারীদের ‘লাল কার্ড’, উপাচার্যের ‘না’

প্রকাশিত: ৫:২৮ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ২, ২০১৯

আন্দোলনকারীদের ‘লাল কার্ড’, উপাচার্যের ‘না’

আলোকিত সিলেট ডেস্ক :::জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) উন্নয়ন প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগে উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলামের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন চলছে। পূর্ব ঘোষিত আল্টিমেটামের শেষ দিনে ‘লাল কার্ড’ প্রদর্শন করেছে আন্দোলনরত শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। এদিকে, উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম বলেছেন, ‘অযৌক্তিক’ দাবিতে পদত্যাগ করবেন না তিনি।

মঙ্গলবার দুপুর ১টায় ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর’ ব্যানারে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার পাদদেশে এ কর্মসূচি পালন করেন তারা।

কর্মসূচিতে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর আন্দোলনের অন্যতম মুখপাত্র দর্শন বিভাগের অধ্যাপক রায়হান রাইন বলেন, ‘কমিশন কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িত উপাচার্য ও তার পরিবারকে আমরা ‘লাল কার্ড’ দেখিয়েছি। এই উপাচার্য নিয়োগ পাওয়ার পর থেকে যতগুলো যৌন নিপীড়নের ঘটনা ঘটেছে তার কোনটার বিচার না করে উল্টো ভুক্তভোগীকে নিপীড়ন করেছেন। এই সবগুলো ঘটনার সঙ্গে উপাচার্য জড়িত। আমাদের আন্দোলনকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য নানাভাবে আন্দোলন দমানোর চেষ্টা করা হয়েছে। সব মিলিয়ে শিক্ষার্থী নিপীড়নকারী, দুর্নীতিবাজ উপাচার্যকে আমরা লালকার্ড দেখাচ্ছি।’

এ সময় তিনি উপাচার্যের পদত্যাগ দাবি করেন। অন্যথায় বুধবার ও বৃহস্পতিবার সর্বাত্মক ধর্মঘটের ডাক দেন। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল প্রশাসনিক কার্যক্রম, ক্লাস বন্ধ থাকবে বলে জানান তিনি। তবে পরীক্ষা এ কর্মসূচির আওতামুক্ত থাকবে।

দর্শন বিভাগের অধ্যাপক আনোয়ারউল্লাহ ভুঁইয়া বলেন, ‘মঙ্গলবার আল্টিমেটামের শেষ দিন ছিলো। আমরা আপনাকে যে সময় দিয়েছি তার মধ্যে সসম্মানে পদত্যাগ করেন নাই। বিগত ছয় বছরে দুর্নীতি আর বিশৃঙ্খলার মধ্যে দিয়ে আপনি বিশ্ববিদ্যালয়কে শেষ করে দিয়েছেন। আপনার দুর্নীতির, অনিয়ম ও বিশৃঙ্খলার বিরুদ্ধে আজকে আমরা ‘লাল কার্ড’ দেখাচ্ছি। পাশাপাশি সরকার কর্তৃক বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নের জন্য যে টাকা এসেছে সে টাকা নিয়ে আপনি যা শুরু করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের মানসম্মান বিক্রি করেছেন আমরা তার তীব্র নিন্দা জানাই। আপনি বিশ্ববিদ্যালয়কে পরিচালনা করতে চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছেন। আমরা এই ব্যর্থ, দুর্নীতিবাজ, সন্ত্রাস ও নিপীড়নকারীদের মদদদাতা উপাচার্যকে আর উপাচার্য ‍হিসেবে দেখতে চাই না। আজকের মধ্যে আপনি পদত্যাগ না করলে যেকোনো ভাবে আপনাকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হবো।’

বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ জাবি শাখার যুগ্ম আহ্বায়ক আদীব আরিফ বলেন, ‘বিভিন্ন গণমাধ্যমে উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলামের দুর্নীতির খবর প্রকাশিত হয়েছে। বিভিন্ন ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠনের সঙ্গে তিনি অর্থ কেলেঙ্কারিতে লিপ্ত হয়েছেন এবং তার পরিবার সেসব কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে। আমরা বারবার বলেছি বিচার বিভাগীয় তদন্ত করুন। কিন্তু তিনি ভ্রুক্ষেপ করলেন না। আমরা আপনার বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ আমলে নিয়ে পদত্যাগের আল্টিমেটাম দিয়েছি। আপনি সেটাতেও কর্ণপাত করলেন না। ঘোষিত সময়ের মধ্যে পদত্যাগ না করলে কঠোর আন্দোলনের মাধ্যমে আপনাকে এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অপসারণ করা হবে।’

এদিকে, আন্দোলনকারীদের পদত্যাগের দাবিকে ‘অযৌক্তিক’ আখ্যা দিয়ে পদত্যাগ করবেন না বলে জানিয়েছেন উপাচার্য ফারজানা ইসলাম। মঙ্গলবার দুপুরে আন্দোলনকারীদের ‘লাল কার্ড’ প্রদর্শন কর্মসূচির কিছুক্ষণ পরেই নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে করেন তিনি।

উপাচার্য বলেন, “আন্দোলনকারীরা বিচার বিভাগীয় তদন্তের যে দায়-দায়িত্ব আমাকে দিয়েছে, সেটি অযৌক্তিক। আমি এটা (তদন্ত) চাইতেও পারি না, করতেও পারি না। এটি সরকারের থেকে উদ্যোগ নেবে অথবা বিচার বিভাগ চিন্তা করবে।

“এখানে আমাকে একটা চাপ সৃষ্টি করার অর্থই হচ্ছে একটা অযৌক্তিক দাবি নিয়ে আমাকে স্বেচ্ছায় পদত্যাগের জন্য আহ্বান করা। যেহেতু যুক্তি নেই, সেখানে পদত্যাগের ইচ্ছা আমি প্রকাশ করছি না।”

আইনজ্ঞ, ইউজিসি ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা করেছেন জানিয়ে অধ্যাপক ফারজানা বলেন, “তারা (সরকার) যদি মনে করে তদন্ত করা উচিত, তাহলে অবশ্যই তারা করবে। সেক্ষেত্রে আমার দিক থেকে যতটুকু সহযোগিতা করা সম্ভব, আমি করব। এর চেয়ে বেশি কিছু তো আমি করতে পারি না।”

‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর’ ব্যানারে আন্দোলন কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন দর্শন বিভাগের অধ্যাপক আনোয়ার উল্লাহ ভূঁইয়া ও অধ্যাপক রায়হান রাইন, অধ্যাপক কামরুল আহসান, নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সাঈদ ফেরদৌস ও অধ্যাপক মির্জা তাসলিমা সুলতানা, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক সোহেল রানা, সম্মিলিত শিক্ষক সমাজের আহ্বায়ক অধ্যাপক আব্দুল জব্বার হাওলাদার, পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক জামাল উদ্দিন, অধ্যাপক খবির উদ্দিনসহ জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোট, ছাত্র ইউনিয়ন জাবি সংসদ, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট ও বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ জাবি শাখার নেতৃবৃন্দ এতে অংশ নেন।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ