অদ্ভুত নিয়মে চলছে সিলেট বিআরটিএ অফিস : ১৬ ‘খলিফা’ রাতে অফিস করেন

প্রকাশিত: ২:১৬ পূর্বাহ্ণ, ডিসেম্বর ৪, ২০১৯

অদ্ভুত  নিয়মে চলছে সিলেট বিআরটিএ অফিস : ১৬ ‘খলিফা’ রাতে অফিস করেন

আলোকিত সিলেট ডেস্ক ::: এবার অদ্ভুত এক নিয়মে চলছে সিলেট বিআরটিএ অফিস। সহকারী পরিচালক (ইঞ্জিনিয়ারিং) মো. সানাউল হক ও লাইসেন্স শাখার মোটরযান পরিদর্শক আবদুল্লাহ আল মামুনের নিযুক্ত ১৬ খলিফা (দালাল) দিনের বেলা বিশ্রামে থাকলেও রাতে করছেন অফিস। শুধু তাই নয়, বিশেষ প্রটোকলের মাধ্যমে তাদের প্রবেশ করানো হচ্ছে অফিসে। শীত মৌসুম হওয়ায় শীতের কাপড় মুড়িয়েই অফিস অভ্যন্তরে প্রবেশ করছেন তারা।

সংবাদ প্রকাশের পর সতর্ক অবস্থানের অংশ হিসেবে দিনের বেলা তাদের বিশ্রামে রাখা হয়। কিন্তু সন্ধ্যার পরপরই ফের হাজির হন দুই কর্মকর্তার এ ১৬ খলিফা।

রোববার (০১ ডিসেম্বর) ও সোমবার (০২ ডিসেম্বর) দুইদিন দুপুর ১২ টা থেকে ২ টা পর্যন্ত সরেজমিনে বিআরটিএ সিলেট অফিস পর্যবেক্ষণ করে সিলেট ভয়েস। পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, রোববার দুপুর ১২ টায় বিআরটিএ অফিস সুনসান নীরবতা আর কর্মকর্তারা অলস সময় পার করছেন। অনেকেই আবার প্রায় ঘন্টাখানেক সময় ধরে ফেসবুক ব্যবহার করছিলেন। এসময় কয়েকজন সেবাগ্রহীতা বিভিন্ন কাজে এলেও কোন কর্মকতাই আগ্রহ দেখান নি। উল্টো মন ভালো নেই বলে খারাপ ব্যবহার করছেন।

এরই মধ্যে  সংবাদ আসে সেই ১৬ খলিফা রাতে অফিস করছেন। এর প্রেক্ষিতে সোমবার সন্ধ্যায় বিআরটিএ অফিসে হাজির হয় সিলেট ভয়েস টিম। এবার ‘দুই কর্মকর্তা ১৬ খলিফা’র বিআরটিএ সান্ধ্যকালীন অফিসে কাজ করেন কি তার সত্যতা যাচাইয়ের পালা। তাইতো সন্ধ্যা ৭ টায় জেলা প্রশাসকের ভবনে অবস্থিত বিআরটিএ অফিসের সামনে গিয়ে দেখা মিলে কিছু মানুষের। পরে চার তলা ভবনের তিন তলায় যেতেই দেখা মিলে অদ্ভুত এক চিত্র। সিঁড়ির মুখে কলাবসিপল গেটে ঝুলানো আছে সুবিশাল তালা। গেটের অভ্যন্তরে পাহারায় একজন যুবক। আর বাইরে দাঁড়ানো বেশ কিছু মানুষ। অবশ্য সকলকেই সময়ে সময়ে নাম ডেকে ডেকে ভিতরে নিচ্ছেন গেটের পাহারাদার। ভিতর থেকে ফোন আসলেই তিনি ফোন রেখে কেউ একজনকে নাম ধরে ডাক দেন। যাকে ডাকা হয় তিনি ভিতরে যান। এবার ভিতরে ঢুকতে কৌশল খোঁজে সিলেট ভয়েস। সাবেক এক কর্মকর্তার পরিচিত এবং ভিতরে থাকা মনসুর সাহেবের কাছে যাওয়ার কথা বললে সিলেট ভয়েস টিমের একজন গোপন ক্যামেরা নিয়ে ভেতরে প্রবেশ করেন।

কিন্তু ভেতরে গিয়ে দেখা যায় দিনের ঠিক বিপরীত চিত্র। দিনে ‘খলিফাবিহীন’ সিলেট বিআরটিএ অফিস অনেকটা নীরব থাকলেও রাতের আঁধারে বিদ্যুতের আলোতেই বেশ সরব। চলছে সকল কাজ। ফাইলপত্র হাতে দালালরা এক কক্ষ থেকে অন্য কক্ষে ছুটে বেড়াচ্ছেন নির্বিঘ্নে। প্রথমেই ৩০৯ নম্বর কক্ষে প্রবেশ করে দেখা যায় কালো জ্যাকেট পরে জানালার পাশে চেয়ারে বসে অনেকটা ব্যস্ত সময় পার করছেন ১৬ খলিফার অন্যতম এক খলিফা (দালাল) মনসুর। তাকে ঘিরে কক্ষের ভিতর-বাইরের বেশ কয়েকজন দালাল দাঁড়িয়ে আছেন। এরপর যেতে হয় পাশের কক্ষে। কক্ষ নং ৩০৮, সেখানেও খলিফাদের দৌরাত্ম্য। এবার যাওয়া হলো রেকর্ড শাখায়। সেখানেতো লঙ্কাকাণ্ড। রেকর্ড কক্ষে খলিফা-দালাল মিলে মিশে একাকার।

অথচ ২৫ নভেম্বর আমাদের এ প্রতিবেদককে দেয়া এক বক্তব্যে বিআরটিএ সিলেটের সহকারী (ইঞ্জিনিয়ারিং) পরিচালক মো. সানাউল হক বলেছিলেন, মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) অফিসে গিয়ে আমি সবাইকে বের করে দেবেন। তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হবে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছিলেন, ‘আমি তাদেরকে অফিস থেকে বের করে দেব। কিন্তু আমি তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারি না।’

এই লোকগুলো ফিরবে না তার কি নিশ্চয়তা রয়েছে জানতে চাইলে তিনি এ প্রতিবেদককে চ্যালেঞ্জ করে বলেন, ‘আমি আপনাকে চ্যালেঞ্জ করে বলছি, আমি এডি থাকা অবস্থায় এই লোকগুলো আর বিআরটিএ সিলেট অফিসে ফিরতে পারবে না। যদি ফিরে তাহলে আপনি আমাকে যা খুশি বলতে পারেন।’

কিন্তু সোমবার (২ ডিসেম্বর) সন্ধ্যার পর থেকে রাত পর্যন্ত তাদের নিযুক্ত ১৬ খলিফার অফিসে আসা নিয়ে জানার জন্য একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।

অবশ্য আগের দিনের মতো নিয়মিত বাণী শোনালেন সিলেটের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মুহাম্মদ আবুল কালাম। ‘খলিফাদের’ সান্ধ্যকালীন অফিসের বিষয়ে ঘটনাস্থলে থেকেই তাঁর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি সিলেট ভয়েসকে বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে আমরা খোঁজ-খবর নেয়া শুরু করেছি। আশা করছি খুব দ্রুত এসব সমস্যার সমাধান হবে।’

এদিকে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের অভ্যন্তরে এমনসব আজগুবি কাণ্ডকে বাতির নিচে অন্ধকারের মতো বলে বিবেচনা করলেন সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) সিলেটের সভাপতি আজিজ আহমদ সেলিম। তিনি সিলেট ভয়েসকে বলেন, বিআরটিএ অফিস যেহেতু জেলা প্রশাসক মহোদয়ের কার্যালয় প্রাঙ্গণের অভ্যন্তরেই, সুতরাং এটা উনারই আগে নজরে আসার কথা ছিলো। তবুও যেহেতু সংবাদ মাধ্যমের ধারাবাহিক প্রতিবেদনে তাদের অনিয়ম এবং দুর্নীতি দৃশ্যমান, সুতরাং জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া উচিৎ। তা না হলে বাতির নিচে অন্ধকারের মতো দেখাবে। তাই আমরা দাবি করবো যেন দ্রুত একটি পদক্ষেপ নেয়া হয়।

অপরদিকে  প্রতিবেদন পড়ে এটি নিয়ে জেলা প্রশাসনে আলোচনা হয়েছে বলে জানালেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. আসলাম উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘আমি প্রতিবেদনগুলো পড়েছি। অত্যন্ত তথ্যবহুল এবং ভালো নিউজ। এসব বিষয়ে আলোচনা চলছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে অবশ্যই স্থায়ী একটি কার্যকরী পদক্ষেপে যাচ্ছি।’

তবে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে বলে জানালেন বিআরটিএ’র পরিচালক (প্রশাসন) মো. ইউছুব আলী মোল্লা। তিনি সিলেট ভয়েসকে বলেন, ‘বিআরটিএ সিলেটের বিভিন্ন বিষয়ে  প্রতিবেদন মাধ্যমে ইতোমধ্যে আমরা অবগত হয়েছি। প্রতিবেদনগুলো আমলে নিয়ে আমাদের সদর দপ্তর কাজ শুরু করেছে। খুব শীঘ্রই সিলেট অফিসের বিষয়ে আমরা একটি কার্যকরী সিদ্ধান্তে আসবো।’

তথ্য সূত্র : সিলেট ভয়েস ডটকম. লিংক সংযুক্ত

ভিডিও দেখতে নিচের লিংকে ক্লিক করুন :

https://www.facebook.com/sylhetvoicedotcom/videos/2508296632761157/

 

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ