কেন গোপন কুঠুরিতে আমার বিচার হবে, প্রশ্ন তুরিন আফরোজের

প্রকাশিত: ৩:২০ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ১২, ২০১৯

কেন গোপন কুঠুরিতে আমার বিচার হবে, প্রশ্ন তুরিন আফরোজের

 আলোকিত সিলেট ডেস্ক :::  একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধীর সঙ্গে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের (আইসিটি) প্রসিকিউটর তুরিন আফরোজের ‘গোপন আঁতাতের’ অভিযোগে ‘শৃঙ্খলা ও পেশাগত আচরণ ভঙ্গ’ এবং ‘গুরুতর অসদাচরণের’ দায়ে ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজকে অপসারণ করা হয়েছে। তবে তুরিন আফরোজ বলছেন, এটা বড়ধরনের এক ষড়যন্ত্র। মন্ত্রণালয় বা তদন্তকারী কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান তার সঙ্গে যোগাযোগ করেনি।

গত সোমবার (১১ নভেম্বর) আইন মন্ত্রণালয়ের উপ-সলিসিটর এসএম নাহিদা নাজমীন স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে তুরিন আফরোজের অপসারণের তথ্য জানানো হয়।

অপসারণের পর আইনমন্ত্রী আনিসুল হক গণমাধ্যমকে বলেন, ‘একজন আসামির সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করার অভিযোগ ছিল তার (তুরিন) বিরুদ্ধে। ওই মামলাটি তিনি নিজে পরিচালনা করছিলেন। আসামির সঙ্গে আলাপ-আলোচনার রেকর্ডটি চিফ প্রসিকিউটরের কাছে পাঠানো হয়। রেকর্ডটি আমরাও যথেষ্ট সতর্কতার সঙ্গে পর্যালোচনা ও পর্যবেক্ষণ করেছি। এ কাজ করতে গিয়ে তার সঙ্গে যতটুকু প্রয়োজন ততটুকু কথা বলেছি। সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতেই তাকে এই পদ থেকে অপসারণ করেছি।’

তবে মন্ত্রীর এই বক্তব্যের প্রতিবাদ করে তুরিন আফরোজ বলেন, ‘মন্ত্রণালয়, কোন দপ্তর, কোন তদন্ত কমিটি, অদ্যাবধি এই বিষয়ে আমার সাথে কোন যোগাযোগ করেনি। কী সাক্ষ্য প্রমাণ নিয়ে আপনারা দেড় বছর সময় কাটালেন তাও আমাকে জানানো হয়নি’।

তুরিন প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘বোরখা পরে আমি কার সাথে কোথায় দেখা করেছি, তার কি অকাট্য প্রমাণ আছে কাছে? যে মামলা হল ২০১৯ সালে, যেটার চার্জ গঠনও এখনও হয়নি, তার নথি আমি ২০১৭ সালে পাচার করলাম কী করে? যে মামলা হল ২০১৯ সালে, যেটার চার্জ গঠনও এখনও হয়নি, সেই মামলার মেরিট আমি কী করে ২০১৭ সালে জানলাম?’

তুরিন আফরোজ বলেন, ‘সাহস থাকলে আমার বিরুদ্ধে প্রাপ্ত সাক্ষ্য-প্রমাণ জনগণের সামনে তুলে ধরা হোক। ২০১৩ সালে গণজাগরণমঞ্চ থেকে আমাকে নিয়োগের দাবি তোলা হয়েছিল। সেদিন আমি জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে প্রসিকিউশনে যোগদান করেছিলাম। আজকে আমার বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগের সাক্ষ্য-প্রমাণ জনগণের সামনে উপস্থাপন করা হোক। এই জাতি জানুক, একজন তুরিন আফরোজকে কী কারণে অপসারিত করা হল? জনগণের আদালতে বিচার চাই। কেন গোপন কুঠুরিতে আমার বিচার হবে? আমি জনগণের রায় মেনে নেব।’

তিনি আরও বলেন, ‘ট্রাইব্যুনাল থেকে আমাকে অপসারণ করে লাভ কার হল এটা নিশ্চয়ই বোঝা কঠিন ব্যাপার না। ২২টি মামলাতে যাদের ফাঁসি আমি নিশ্চিত করেছি তাদের পরিবার এবং সমর্থকরাই এতে খুশি হয়েছে। যুদ্ধাপরাধী দেলাওয়ার হুসেইন সাইদীর ছেলেরও আজকে খুশি আর ধরেনা। মাসুদ সাইদী তো আমার বিচারও চাইছেন। কিন্তু একই সাথে দেখেন কিছু তথাকথিত আওয়ামী লীগারদেরও আনন্দ! আমার ভয় তো এসব আওয়ামী লীগারদের নিয়ে, এরা কোন রাজনীতি করে? আমেনা কোহিনুর, মিল্লাত হাসানগং এরা আসলে কারা? কোন যুদ্ধাপরাধীর আত্মীয়? দেখেন তো এদের কার কার বাপের নাম রাজাকার তালিকাতে আছে?’

তুরিন বলেন, ‘জীবনের অনেক সত্য অপ্রকাশিত থেকে যায়। আমি ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর হিসেবে থাকি বা না থাকি, আপোষহীনভাবে একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের বিচার চাই। এই বিচারের দাবিতে অনেক আন্দোলন আমি করেছি, রাস্তায় মার পর্যন্ত খেয়েছি। আমার এবং আমার মেয়ের জীবনকে ঝুঁকির মুখে ফেলেছি। আমি শত ভাগ সততা দিয়ে প্রসিকিউটর হিসেবে আমার দায়িত্ব পালন করেছি।’

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ