সিলেট ২৩শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১০ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ১৪ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি
প্রকাশিত: ৬:০০ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ৫, ২০১৯
আলোকিত সিলেট ডেস্ক ::: ১৯১৯ সালের ৫ নভেম্বর। হেমন্তের শীত শীত সকাল। একটা ট্রেন এসে থামলো সিলেট রেলওয়ে স্টেশনে। প্রতিদিনই যেমন থামে। তবে এই ট্রেন থেকে নেমে আসলেন দীর্ঘ শুভ্রকেশ আর শশ্রুমণ্ডিত বিশেষ একজন। ছয় বছর আগে যিনি উপমহাদেশের প্রথম ব্যক্তি হিসেবে নোবেল জয় করেছেন। অবশ্য গান আর কবিতায় আরও আগেই তিনি জয় করে নিয়েছেন বাঙালির হৃদয়। শ্রীহট্টে পা রাখলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। এই বছর রবীন্দ্রনাথের সিলেট পরিভ্রমণের একশ’ বছর পূর্ণ হচ্ছে।
সিলেটে তিনদিন অবস্থান করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ। কবিগুরুর এই সফর নিয়ে প্রখ্যাত সম্পাদক নলিনীকুমার ভদ্র লিখেন ‘কবির জীবনী থেকে এ তিনটি দিনের কাহিনী (সিলেট ভ্রমণের ৩ দিন) বাদ দিয়ে যদি কোনো শ্রীহট্টের ইতিহাস লেখা হয় তাহলে তা হবে অসম্পূর্ণ। অনাগত যুগে আমাদের ভবিষ্যদ্বংশীয়েরা এ কাহিনী পড়ে গর্ব অনুভব করবে- যদিও ঈর্ষা করবে তারা আমাদের অপরিসীম সৌভাগ্যকে।’
গর্ব আর ঈর্ষা জাগানিয়া সেই স্মৃতির স্মরণে এবার সিলেটে ব্যাপক আয়োজনের মধ্য রবীন্দ্রনাথের পরিভ্রমণের একশ’ বছর পূর্তি পালন করা হচ্ছে।
সিলেট ভ্রমণের আনন্দ স্মৃতির কথা উল্লেখ করে রবীন্দ্রনাথ ইতিহাসবিদ ও কলম্বো বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য কালিদাস নাগকে ১৯১৯ সালের ৩ ডিসেম্বর এক চিঠিতে লিখেন-
‘আশ্রমে ফিরে এসেছি। পাহাড় (শিলং) থেকে নেমে আসবার পথে গৌহাটি, শিলেট (সিলেট) ও আগরতলা ঘুরে এলুম। বলা বাহুল্য বক্তৃতার ত্রুটি হয়নি। দিনে চারটে করে বেশ প্রমাণসই বক্তৃতা দিয়েছি এমন দুর্ঘটনাও ঘটেছে। এমনতর রসনার অমিতাচারে আমি যে রাজী হয়েছি তার কারণ ওখানকার লোকেরা এখনও আমাকে হৃদয় দিয়ে আদর করে থাকে এটা দেখে বিস্মিত হয়েছিলুম। বুঝলুম কলকাতা অঞ্চলের লোকের মত ওরা এখনো আমাকে এত বেশি চেনেনি ওরা আমাকে যা-তা একটা কিছু মনে করে। তাই সেই সুযোগ পেয়ে খুব করে ওদের আমার মনের কথা শুনিয়ে দিয়ে এলুম।
সিলেটে ভ্রমণকালে ৬ নভেম্বর টাউন হল প্রাঙ্গণে ও ৭ নভেম্বর মুরারিচাঁদ (এমসি) কলেজের ছাত্রাবাসের উদ্যোগে কবি-সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে দুটি বক্তৃতা দেন রবীন্দ্রনাথ। পরবর্তীতে টাউন হলের বক্তৃতা ‘বাঙালীর সাধনা’ নামে ‘প্রবাসী’ পত্রিকার আর এমসি কলেজের বক্তৃতার সারমর্ম ‘আকাঙ্ক্ষা’’ নামে ‘শান্তিনিকেতন’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়।
ভ্রমণকালে এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যে মুগ্ধ হয়ে সিলেটকে নিয়ে একটি কবিতাও লিখেন রবীন্দ্রনাথ। সেসময় বাংলা থেকে বিচ্ছিন্ন করে সিলেটকে আসামের সাথে যুক্ত করা হয়েছিলো। এ নিয়ে আক্ষেপও ফুটে ওঠে রবীন্দ্রনাথের কবিতায়। শতবর্ষ পরেও সিলেটের বর্ণনা দিতে গিয়ে এখনও অনেকেই দ্বারস্থ হন সেই কবিতার।-
‘মমতাবিহীন কালস্রোতে/ বাঙলার রাষ্ট্রসীমা হতে/ নির্বাসিতা তুমি/ সুন্দরী শ্রীভূমি।/ ভারতী আপন পুণ্য হাতে/ বাঙালির হৃদয়ের সাথে/ বাণীমালা দিয়া/ বাঁধে তব হিয়া/ সে বাঁধনে চিরদিনতরে তব কাছে/ বাঙলার আশীর্বাদ গাঁথা আছে।’
এই কবিতা থেকে ধার করে সিলেটকে ‘সুন্দরী শ্রীভূমি’ হিসেবেও আখ্যায়িত করে থাকেন কেউ কেউ।
লেখক ও রবীন্দ্র গবেষক অধ্যাপক নৃপেন্দ্র লাল দাশ বলেন, রবীন্দ্রনাথ কেবলমাত্র সিলেটকে নিয়েই কবিতা লিখেছেন। অন্যকোন স্থান সম্পর্কে কোথাও কবিতা লিখেছিলেন কি না জানা যায় না। রবীন্দ্র হস্তাক্ষরে লেখা কবিতাটির শিরোনাম ছিল না। তারিখও ছিল না। স্থান নামও ছিল না। পরে কবিপ্রণামে ‘শ্রীভূমি’ নামে প্রকাশিত হয়। রবীন্দ্র গবেষকদের অনুমান ১৯৩৬ সালে এই কবিতা রচিত হয়েছিল।
সিলেটে এবার রবীন্দ্র স্মরণোৎসব মহাসমারোহে পালনের উদ্যোগ নেওয়া হলেও দীর্ঘদিন ধরেই অযত্ন অবহেলায় পড়ে আছে রবীন্দ্র-স্মৃতিচিহ্নগুলো।
সিলেট ভ্রমণকালে নগরীর নয়াসড়কের মিশনারি বাংলোয় (পাদ্রী বাংলা নামে পরিচিত) থাকার ব্যবস্থা হয় রবীন্দ্রনাথের। এই বাংলোটির এখন আর অস্তিত্বই নেই। খ্রিস্টান মিশনারি নেতারা বাংলোসহ ওই জায়গাটি অনেকটা গোপনে বিক্রি করে দেন। বর্তমানে সেখানে সিলেট উইমেনস মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল একটি বেসরকারি হাসপাতাল রয়েছে।
নগরীর চৌহাট্টা এলাকার এতিহ্যবাহী সিংহ বাড়িতে গিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ। বিগত চারদলীয় জোট সরকারের আমলে এ বাড়িটিকে অর্পিত সম্পত্তি উল্লেখ করে একটি প্রভাবশালী মহলকে বন্দোবস্ত দেওয়া হয়েছিল। তবে আন্দোলনের মুখে পরে বন্দোবস্ত বাতিল করে কর্তৃপক্ষ। এমসি কলেজেও নেই রবীন্দ্রনাথের স্মৃতিচিহ্ন ধরে রাখার মতো কোনো উদ্যোগ।
সিলেট ভ্রমণকালে নগরীর বন্দরবাজারের ব্রাহ্মমন্দিরে দুইবার যান রবীন্দ্রনাথ। সেখানে সমবেত প্রার্থনায়ও অংশ নেন। ব্রাহ্মমন্দিরটি এখন জরাজীর্ণ অবস্থায় কোনোরকম টিকে আছে।
রবীন্দ্রনাথের মন কেড়েছিল সিলেটের মনিপুরী নৃত্য। নগরীর মাছিমপুরের মণিপুরি পল্লীর মণ্ডপে বসে নৃত্য দেখেছিলেন তিনি। দীর্ঘদিনের দাবির পর গত বছর এই মণ্ডপ প্রাঙ্গণে রবীন্দ্রনাথের একটি আবক্ষ মূর্তি স্থাপন করে সিলেট সিটি করপোরেশন। এটি নিয়েও আপত্তি জানায় মৌলবাদী গোষ্ঠী।
কবি তুষার কর বলেন, কেবল গান বাজনা আর লোকদেখানো অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে রবীন্দ্রস্মরণ নয়। রবীন্দ্রনাথের স্মৃতিচিহ্নগুলোও আমাদের সংরক্ষণ করা প্রয়োজন। তাতে আগামী প্রজন্ম এ বিষয়ে জানতে পারবে।
প্রধান উপদেষ্টা : আবুল মাল আব্দুল মুহিত
উপদেষ্টা : ড. এ কে আব্দুল মোমেন (এমপি)
উপদেষ্টা : ড. আহমদ আল কবির
প্রকাশক : আলম খান মুক্তি
প্রধান সম্পাদক : বিলাল খান
সম্পাদক : মোবারক হোসেন পাপ্পু
বার্তা সম্পাদক : সাকারিয়া হোসেন সাকির
অফিস : ১/৬ নবীবা কমপ্লেক্স, আম্বরখানা সিলেট। মোবাইল নং-০১৭১৬-৩৮৭৫৩২
সম্পাদক-০১৭১২-৭৪৫২৬৭
০১৭১০-১৩০৪১১
ইমেইল : alokitosylhet24@gmail.com
Design and developed by web-home-bd